শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট
হিজড়াদের মসজিদে সম্প্রীতির মেলবন্ধন, তারাবির পর আরবি শিক্ষা

হিজড়াদের মসজিদে সম্প্রীতির মেলবন্ধন, তারাবির পর আরবি শিক্ষা

 রেজাউল করিম রেজা,ময়মনসিংহ: তারাবি নামাজের পর হিজড়ারা হুজুরের কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন।তারাবি নামাজের পর হিজড়ারা হুজুরের কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সরকারের জমিতে হিজড়াদের উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে মসজিদ। সেখানে নিয়মিত ধর্মীয় শিক্ষাসহ নামাজ আদায় করছেন হিজড়ারা। এতে স্থানীয়দের প্রশংসায় ভাসছেন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর এ লোকজন। ময়মনসিংহ নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরকালিবাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসবাস হিজড়াদের। সরকারের ৩৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করেন ৪০ জন হিজড়া। গত ২৬ জানুয়ারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই হিজড়াদের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গায় মসজিদ ও কবরস্থানের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। এতে একটি কবরস্থানও রয়েছেমসজিদের পুরো কাজ এখনো সম্পন্ন না হলেও রোজার তিনদিন আগে উদ্বোধন করা হয়। এতে একটি কবরস্থানও রয়েছে।

পরে হিজড়ারা নিজেদের শ্রম ও অর্থে স্থাপন করেন টিনশেড মসজিদ। মসজিদের পুরো কাজ এখনো সম্পন্ন না হলেও রোজার তিনদিন আগে উদ্বোধন করা হয়। নিয়মিত নামাজ, তারাবি এবং ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণের জন্য হিজড়াদের পাশাপাশি মসজিদে আসছেন স্থানীয় মুসল্লিরাও। জয়িতা তনু হিজড়া বলেন, ‘নিজেদের নির্মিত মসজিদে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাসহ নামাজ আদায় করব, এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। কারণ সাধারণ মসজিদে আমাদের নামাজ আদায় করতে দেওয়া হয় না। আর মসজিদ নির্মাণে আমাদের জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়া হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। মসজিদের পাঁচ লাইনে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষ হয়। তারাবি নামাজের পর আমরা হুজুরের কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করি। আমরা আমাদের মসজিদের নাম দিয়েছি দক্ষিণ চর কালীবাড়ি আশ্রয়ণ জামে মসজিদ। মসজিদটির উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ জানান, ‘দেশে এমন মসজিদ এই প্রথম। আগেও একটি শহরে মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা আর হয়ে উঠেনি।’ দক্ষিণ চর কালীবাড়ি মসজিদের ইমাম আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। কারও সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই। দশজনের মতো হিজড়ারাও মানুষ। তারা যেহেতু ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নামাজ আদায় করতে চায়, তাই তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত। তারা খুব আন্তরিক। এলাকাবাসীও তাদের পছন্দ করে।’ স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, ‘হিজড়াদের আচার-আচরণে অনেকে বিরক্ত হোন। কিন্তু অনেক দিন ধরে আমাদের এখানে বসবাসকারী হিজড়াদের আচার-আচরণে এমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। তারা সামাজিকভাবে সকলের সাথে বসবাস করছেন। তাদের নির্মিত মসজিদে নামাজ আদায় করারও সুযোগ হয়েছে। ধর্মের প্রতি তাদের এমন আগ্রহ প্রশংসার দাবি রাখে।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, হিজড়া সম্প্রদায়ের সভাপতির তনু হিজরা আমাকে আমার কাছে এসে বলল আমাদের জন্ম টাই কি ভুল, যদি আমাদের জন্মটা ভুল না হয় তাহলে আমাদের জন্য মসজিদে নামাজ পড়া বাধা, কবরস্থানের লাশ দাফনে বাধা, মানুষ আমাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কেন? আমরা ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে ইবাদত বন্দেগী করতে চাই এজন্য আমাদের একটি মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গার প্রয়োজন। কোন হিজরার কথাগুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলে , চোখের কোনে চলে আসে এক ফোটা জল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক মসজিদের জায়গা ও কবরস্থান আমি তাদেরকে উপহার দিব। বিষয়টা যে এইভাবে ভাইরাল হবে সেটা আমার জানা ছিল না। হিজড়াদের জন্য গুণগত মানে ট্রেনিং সহ আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |